77
SHARE

সম্প্রতি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরার পরিকাঠামোর উন্নতিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন৷ এ প্রসঙ্গে মানিক সাহা বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার ‘লক্ষ্য ২০৪৭’ রূপায়ণের জন্য কাজ করছে। আমাদের ভিশন এই সময়ের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যকে একট উন্নত রাজ্যে রূপান্তর করা। এই উদ্দেশ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর HIRA+ মডেলের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি-সহ বেশ কিছু উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি৷

মানিক সাহার বক্তব্য অনুযায়ী, এর ফলে ব্যবসা করা সহজ হবে, ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধি পাবে, জীবনযাত্রার মানও অনেক সহজ হবে৷  রাজ্যে অফিস গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত বিস্তৃতি করা হয়েছে৷ এছাড়া সরকার পরিচালিত কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্য BMS (বেনিফিসিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) চালু করা হয়েছ৷

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ত্রিপুরা সরকার নীতি আয়োগের নির্দেশনা অনুসারে সুশাসন বিভাগ এবং এস.আই.টি( স্টেট ইন্সটিটিউট অফ ট্রান্সফরমেশন)  প্রতিষ্ঠা করেছে।

শিল্প ও বিনিয়োগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কৃষির উপর শ্রমশক্তির নির্ভরতা ৫০% কমানোর উপর জোর দিচ্ছি৷ বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি বাণিজ্য ১ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করছি।  আমাদের লক্ষ্য মাত্রা হবে ২০৪৭ সালের মধ্যে জি.এস.ডি.পিতে (Gross domestic product) পর্যটনের অবদান ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা”।

পরিকাঠামো, যোগাযোগ ও লজিস্টিক সেক্টরের উন্নতির জন্য সরকার জোড় দিচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রেও ৮০% কৃষি জমি সেচ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ লেনের সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য মাত্রাও নেওয়া হয়েছে৷

মানিক সাহা আরও বলেন,, “পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগেও আমরা কাজ করছি৷ আমরা বনজ উৎপাদনকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি করতে চাই।

বৈঠকে তিনি জানান, গভর্নেন্স সেক্টরে রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে একটি ডিজিটাল সোসাইটি করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। এই জন্য সরকারের তরফ থেকে নীতি আয়োগের ৮ম সাধারণ পরিষদের সভায় আলোচিত সমস্ত বিষয় নিয়েই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷ “ত্রিপুরা শিল্প বিনিয়োগ প্রচার সংক্রান্ত প্রকল্প” চালু করে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাবসা করার পদ্ধতিকে সহজ করা হয়েছে৷ তাছাড়াও মাণিক সাহা দাবী করেছেন পর্যটনের প্রসারেও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা  ও দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা (DDUGKY) এর মাধ্যমে শিল্পে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ১৯টি শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা রাজ্য সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন রাজ্য সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ, মহিলাদের স্টার্ট-আপগুলির জন্য বন্ধক-মুক্ত ঋণ ও সম্পত্তির নিবন্ধনে স্ট্যাম্প শুল্ক হ্রাস, কোনও টিউশন-ফি  না রাখার সিদ্ধান্ত ইত্যাদি। এছাড়াও মহিলা ছাত্রীদের জন্য সরকারি ডিগ্রী কলেজ ফি মুকুব-সহ ৪.৭১ লক্ষ গ্রামীণ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সংগঠিত করা হয়েছে৷ এর ফলে বর্তমানে ত্রিপুরার গ্রামীণ অঞ্চলে ৮৩,৪২৪ জন ‘লাখপতি দিদি’ রয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শহরাঞ্চলে নারী ও কন্যা শিশুদের জন্য ‘পিঙ্ক টয়লেট’ চালু করা হয়েছে।  জলজীবন মিশনের অধীনে ৮২% পরিবার বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ পেয়েছেন। ৪৭১টি প্রকল্প দুর্গম অঞ্চলে চালু করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থের উন্নতি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এম.বি.বি.এস আসনের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং আগরতলা সরকারি নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে।

রাজ্য সরকার ৯টি সুপার-স্পেশালিটি বিভাগ শুরু করেছে। সেখানে প্রথমবারের জন্য ত্রিপুরায় কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধা রাখা হয়েছে৷  এছাড়াও প্রায় ১৫ লক্ষ সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত কার্ড পেয়েছেন।

সেই সঙ্গে ৪ লক্ষের অধিক নাগরিক মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা কার্ড পেয়েছেন। এছাড়াও ২৫টি জন-ঔষধি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ আরও অতিরিক্ত ৮টি জন-ঔষধী কেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্র সম্পর্কেও তিনি বলেন, বোর্ড পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থীদের জন্য ‘বছর বাঁচাও’ প্রকল্প চালু হয়েছে৷ সি.এম-সাথ স্কিম, ‘সুপার-30’ স্কিম ‘নিপুন’, ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস’, ‘স্কুলে আইসিটি’ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়েছে স্কুলে।

তিনি জানিয়েছেন, পাওয়ার সেক্টরের জন্যও ত্রিপুরা সরকার বদ্ধপরিকর৷ এই জন্য ‘ত্রিপুরা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্রেংথেনিং অ্যান্ড জেনারেশন এফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট’টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে৷ ‘পিএম জনমন’-এর অধীনে রিয়াং সম্প্রদায়ের ৩৬১৮টি পরিবার জন্য ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ পেয়েছেন৷  এছাড়াও ‘ব্রু সেটেলমেন্ট’ প্রোগ্রামের অধীনে ৪৫১২ ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব করা হয়েছে।


SHARE