CM Biplab Deb
SHARE

রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই পরিপক্কতার পরিচয় দিচ্ছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। একটা সময় সর্বদা আবুলতাবুল কথা বলে সামাজিক মাধ্যম গুলিতে মিম হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে বারংবার নিজেকে প্রমান করছেন। এবারের সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তারা ঝাজাকো ভাশনে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত  দিল্লী থেকে জাতীয় নেতৃত্বদের সান্নিধ্য দারুন ভাবে কাজে লাগাচ্চজেন তিনি। বুধবার ফের একবার নিজেকে সংবাদের শিরোনামে তুলে এনেছেন তিনি।

লোকসভায় বাজেট ভাষণে গোটা দেশের নজর কাড়লেন বিপ্লব কুমার দেব। তিনি দেশের প্রান্তিক ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরা থেকে লোকসভায় জয়ী হয়েছেন। তিনি ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেছেন তার উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিপ্লব কুমার দেব বিরোধীদের যেমন সমালোচনা করেছেন তেমনি প্রশংসা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, বিকাশের বাজেট পেশ করেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী। সেই সঙ্গে, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত নির্মাণে রূপ দেওয়া হয়েছে এই বছরের বাজেটে। অর্থমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানান। বিপ্লব কুমার দেব বলেন, চিন, জাপান, কোরিয়া যেমন স্কিল ডেভেলাপ করেছে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় ভাবতও স্কিল ডেভেলাপমেন্টের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে। এবারের বাজেট সেই বিষয়ের উপরও বরাদ্দ রেখেছেন।প্রধানমন্ত্রী। যেখানে বেকার যুবক-যুবতীদের রোজগারের গ্যারান্টি রয়েছে। গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দেশের ৫০০ টি কোম্পানীতে মোদী গ্যারান্টির মাধ্যমে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অন্তিম রাজ্য ত্রিপুরার অন্তিম গ্রাম

থেকে আমি আজ লোকসভায় এসেছি প্রধানমন্ত্রীর দৌলতে। মোদীজীর জন্যই দূধ এবং গেহু উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম ভারত। কৃষি এবং আনাজেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দেশ। এবারে বাজেটে বিকাশের ক্ষেত্রে ১.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কৃষকদের জন্য রাখা হয়েছে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে অতিরিক্ত সাবসিডির ব্যবস্থা। মোদীজীর নেতৃত্বে গত দশ বছরে ১৪ লাখ কোটি টাকা এমএসপিতে সুবিধা পেয়েছে। দেশের কৃষি ফলন বেড়েছে।

অথচ দেশের কংগ্রেস কোনো দিন যুবকদের উন্নয়নের কথা ভাবেনি। দেশে রোজগার নেই এটা ভুল, মূল কথা হয়েছে পারদর্শিতা কম। মোদীজী সেই বিষয়টির উপর জোর দিয়ে পৃথক মন্ত্রক খুলেছেন। এদিন প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করতে গিয়ে সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব বলেন, যে শিশুটি ভারতে জন্মাবে তার প্রথম দিন থেকেই মাতৃ পুষ্টি যোজনার অধীনে চলে যাবে। তার সঙ্গে রয়েছে উজ্জ্বলা যোজনা, আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা, জল জীবন মিশন আরও অনেক কিছু। সবকিছু দেশবাসী পাচ্ছে মোদীজির কল্যাণে। এদিন তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, ইন্দিরা গান্ধী দেশের মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সোনিয়া গান্ধী ইউপিএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন দশ বছর। অথচ মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ বিলটি পাশ করতে পারেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মহিলারা আজ ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ পাচ্ছেন। মোদীজী মহিলাদের জন্য এসএসজি গ্রুপের মাধ্যমে রোজগারের সুযোগ করে দিয়েছেন। যেখানে দেশের ১০ কোটি বোন রুজি রোজগারের সাথে যুক্ত। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন।  নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে দেশের দায়িত্বভার হতে নিয়েছেন। তারপর থেকে দেশ আর্থিক দিক দিয়ে অনেকটাই উন্নত হয়েছে।তাঁর কথায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রায় ৪৮ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গত বছরের বাজেটের তুলনায় ১৮.২ শতাংশ বেশী মূলধনী ব্যয় ধরা হয়েছে। মূলধনী ব্যয় বেশী ধরা হলে দেশে সরকারি এবং পরিকাঠামোর দিক দিয়ে অনেক সুবিধা হয়। বাজেটের সব অংশের লোকেদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রেখে দেশকে নতুন দিশায় নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।এদিন তিনি আরও বলেন, এই বাজেট মাধ্যমে দেশের সব রাজ্য ৪ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি বেশী পাবে। জনকল্যানমুখী বাজেট পেশ করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ৫ বছরের সময়কালে  ৪ কোটি ১ লক্ষ যুবক- যুবতীর জন্য কর্মসংস্হান, দক্ষতা এবং অন্যান্য সুযোগ দেওয়া হবে।  এই বাজেটে এটা স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের যুবক যুবতীদের পাশে রয়েছেন। এই বাজেটে শিক্ষা, কমসংস্থান এবং দক্ষতার জন্য ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

পাশাপাশি, দেশের গ্রাম এবং গরিবের উন্নতির পথে এই কেন্দ্রীয় বাজেট এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনায় আরও ৫ বছর বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে সর্বপ্রথম। কিন্তু কংগ্রেসের আমলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে সর্বপ্রথম ছিল না। চাল ও গম উৎপাদন দেশ দ্বিতীয় রয়েছে। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের মহিলাদের স্বশক্তিকরণ উপর জোর দিয়েছেন।  সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে কেন্দ্র কংগ্রেসের সরকার থাকাকালীন ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে কংগ্রেসকে মসনদ থেকে সরিয়ে ছিল। নিজেদের মিত্রতা রক্ষার করার জন্য ত্রিপুরায় সিপিএমকে বসিয়ে ছিল। তার কটাক্ষ, পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির উপর একাধিক বার সিপিএম আক্রমণ চালালেও এখন তারা একসাথে জোট করেছে।

তার দাবি, ২০৪৭  সাল পর্যন্ত দেশে  বিজেপি থাকবে। ৪০০ এর বেশি  আসন নিয়ে বিজেপি পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসবে। কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আসাম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েও একবারের জন্য ত্রিপুরায় আসেননি।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মোট ৯০ বার উত্তর পূর্বাঞ্চল সফর করেছেন। এবার কথা কতখানি পরিপক্ক বিপ্লব দেব তা সহজেই অনুমেয়। জাতীয় রাজনীতি, ভারত বর্ষের বিশাল দেশের কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে একটানা ৪০ মিনিট কথা বলা চারটে খানি কথা নয়। তবে এদিন বিপ্লব দেবের সম্পুর্ন ভাষনেই ছিলো মোদী বন্দনা। ফলে এখনো খেলা বাকী আছে, যারাই ভাবছেন রাজ্য রাজনীতি থেকে বিপ্লব দেবের পাতা কাটা গেছে তারা ভুল ট্রেকে হাটছেন। প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের কাছে যথেষ্ট গ্রহন যোগ্যতা এখনো ধরে রেখেছেন বিপ্লব কুমার দেব। ফলে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে বিপ্লব দেন লং টাইমের খালাড়ি বলেই মতামত রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের।


SHARE