জামতারা গ্যাং বা ভিন রাজ্যের অন্য কোনও কুখ্যাত গ্যাং নয়, কলকাতার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর পরিচালিত প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ৩৪ লক্ষ খোয়ালেন অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা কর্তা। সম্প্রতি এনিয়ে লালবাজার অভিযোগ করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই মহিলা নৌসেনা কর্তা। সেই অভিযোগে তদন্ত নেমে এই চক্রের দুই পান্ডা সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যার মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ধৃত ৩ জনের নাম হল- সৃষ্টি মণ্ডল, অমিত সরকার এবং গঙ্গারাম সাউ। শেয়ারে লগ্নির নামে ওই মহিলা নৌসেনা কর্তার কাছ থেকে তারা এই পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রতারণার জন্য তারা শেক্সপিয়র সরণি এলাকার জহরলাল নেহরু রোডে একটি অফিস খুলেছিল। গঙ্গারাম রাউটার ব্যবহার করে মেসেজ পাঠাতো। একদিন সেই মেসেজ পেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা কর্তা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা প্রথমে বিভিন্ন প্রমোশনাল ভিডিয়ো পাঠিয়ে লাইক দেওয়ার বদলে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিত। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে লগ্নির প্রলোভন দিত। আর তাতে পা দিয়ে একে একে প্রায় ৩৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা খুইয়েছিলেন ওই প্রাক্তন নৌসেনা কর্তা। কিন্তু, টাকা ফেরত তা না পাওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার পরেই দেখা যায়, ওই দুটি গ্রুপ বন্ধ করে দেয় প্রতারকরা। এরপরে দেরি না করে তিনি লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সেই অভিযোগ পেয়ে তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে যে এই পরিমাণ টাকা ১১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তোলা হয়েছে। সেই অ্যাকাউন্ট নম্বর ধরে তদন্তে নেমে কয়েকটি মোবাইল নম্বরের হদিস পান গোয়েন্দারা। সেই সূত্রেই ওই ছাত্রীর সন্ধান পান তাঁরা। জানা গিয়েছে, সৃষ্টি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ’র পড়ুয়া। প্রথমে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাকে জেরা করে এই চক্রের আরও দুই পান্ডা গঙ্গারাম এবং অমিত সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও জানা যায়, শেক্সপিয়র সরণিতে তাদের অফিস রয়েছে। পুলিশ ওই অফিসে হানা দিয়ে ৪০টি সিম কার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে। আরও জানা গিয়েছে, তারা এভাবেই বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবে কতজনের সঙ্গে তারা এভাবে প্রতারণা করেছে? তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। রবিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে ১৫ জুলাই পর্যন্ত তাদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।